মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া :: কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার অন্তর্গত মগনামা লঞ্চঘাটে অবস্থিত কক্সবাজার জেলা পরিষদের মালিকানাধীন জায়গায় নির্মিত এবাদতখানা মার্কেটের এবাদত খানার একটি কক্ষ গোপনে এক প্রভাবশালীকে মাসিক ৪ শত টাকার বিনিময়ে ৫ বছরের জন্য ভাড়া দেওয়ার তথ্য সম্প্রতি ফাঁস হলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এবাদত খানার কক্ষ ভাড়া দেওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয় মুসল্লিরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মুসল্লিরা জেলা পরিষদের এমন কান্ডজ্ঞানহীন ঘটনাকে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত বলেও মন্তব্য করেছেন।
স্থানীয় সচেতন মহল ও মুসল্লিরা অবিলম্বে এবাদত খানার কক্ষ ভাড়ার চুক্তিপত্র বাতিলপূর্বক মুসল্লিদের এবাদতের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা পরিষদ বিগত ৪/৫ বছর পূর্বে পেকুয়া উপজেলার মগনামা লঞ্চঘাটের সান লাইন বাস কাউন্টারের পাশে তাদের জায়গায় এবাদত খানা মার্কেট নামকরণ করে ৪ কক্ষ বিশিষ্ট একটি একতলা বানিজ্যিক মার্কেট নির্মাণ করে। মার্কেটে ওযুখানাসহ একটি কক্ষ পথচারী ও যাত্রীদের এবাদতের জন্য সংরক্ষিত করে রাখা হয়। মার্কেটে আরো তিনটি দোকান রয়েছে। এসব দোকান স্থানীয় তিন ব্যক্তির কাছে পত্রিকায় ইজারা/ভাড়া বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করেই গোপনীয়ভাবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। গোপনে দোকান ভাড়া দেওয়ার নেপথ্যে রয়েছে জেলা পরিষদের তৃতীয় শ্রেনীর এক দূর্নীতিবাজ কর্মচারী। সেই কর্মচারীর বাড়ি পাশের কুতুবদিয়া উপজেলায় বলে জানা গেছে। মুসল্লিদের ওযুর পানির সুবিধার্তে জেলা পরিষদ সেখানে একটি গভীর নলকূপও স্থাপন করেছিল। মার্কেট নির্মাণের পর থেকে এবাদত খানায় পথচারী ও যাত্রীরা নামাজের ওয়াক্ত হলে সালাত আদায় করতো। এবাদত খানা নির্মাণের কয়েক মাসের মধ্যে ওযু খানার পানির মোটরসহ নলকূপের সরঞ্জামাদি চুরি হয়। এরপর এবাদত খানায় সালাত আদায়ে সমস্যার সম্মুখীন হন মুসল্লিরা। এবাদত খানার নলকুপ ও পানির মোটর চুরি হলেও জেলা পরিষদ কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। কিন্তু গত ০১/০২/২০১৮ ইংরেজী তারিখ কক্সবাজার জেলা পরিষদ এবাদত খানার ওই কক্ষটি পত্রিকায় ইজারা/ভাড়া দেওয়ার জন্য জাতীয় পত্রিকা ও স্থানীয় পত্রিকায় কোন ধরনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করেই গোপনে মগনামা লঞ্চঘাটের এক ব্যক্তিকে ৫ হাজার টাকা সেলামীতে ৫ বছরের জন্য মাসিক ৪ শত ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়ে একটি চুক্তিপত্র করে ভাড়া দিয়ে দেয়! চুক্তিপত্রে জেলা পরিষদের পক্ষে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর রয়েছে।
সরেজমিনে গতকাল ৩০ জুলাই সকালে পেকুয়া উপজেলার মগনামা লঞ্চঘাটে পরিদর্শন করে দেখা গেছে,কক্সবাজার জেলা পরিষদের কাছ থেকে এবাদত খানাটি ভাড়া নিয়ে ওই প্রভাবশালী ব্যক্তি সিহাব উদ্দিন নামের অপর এক ব্যক্তিকে মাসিক ২ হাজার টাকার বিনিময়ে ২০ হাজার টাকা সেলামীতে ভাড়া দিয়েছে। আর এবাদত খানাটি ভাড়া নিয়ে তার উপর আল মদিনা ফিশিং নামের মাছ ক্রয় বিক্রয়ের একটি প্রতিষ্টানের সাইনবোর্ড ঝুলানো অবস্থায় দেখা গেছে। সাইনবোর্ডে থাকা মোবাইল নাম্বারে জনৈক সিহাব উদ্দিন (ছোট) কে ফোন করা হলে তিনি এবাদত খানাটি ঘাট এলাকার এক ব্যক্তির কাছ থেকে উপ-ভাড়া নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।
জানা যায়, জেলা পরিষদের সম্পত্তি (অর্জন, ব্যবস্থাপনা, সংরক্ষণ ও হস্তান্তর) বিধিমালার ৭ নং অনুচ্ছেদ সম্পূর্ন লংঘন করে কক্সবাজার জেলা পরিষদ মগনাম লঞ্চঘাটের এবাদত খানার কক্ষটি ভাড়া দিয়েছেন। ওই বিধিমালার ৭ নং অনুচ্ছেদে পরিষদের সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা ও পরিষদের সম্পত্তির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে এবং, জনস্বার্থে, পরিষদের মালিকানাধীন সম্পত্তি ইজারা বা ভাড়া প্রদানের ক্ষেত্রে (ক)পরিষদের মালিকানাধীন জমির দখল বজায় রাখিতে হইবে; (খ) রাজস্ব আয়ের উৎস সৃষ্টিকল্পে পরিষদের মালিকানাধীন জমি অনূর্ধ্ব ১(এক) বৎসরের জন্য ইজারা বা ভাড়া প্রদান করা যাইবে; (গ) দফা (খ) এর শর্ত অনুযায়ী পরিষদের মালিকানাধীন সম্পত্তি ইজারা বা ভাড়া প্রদানের লক্ষ্যে বহুল প্রকাশিত ১(এক) টি বাংলা বা ইংরেজি জাতীয় দৈনিক পত্রিকাসহ সংশ্লিষ্ট জেলার বহুল প্রকাশিত ১(এক) টি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রদান করিতে হইবে; (ঘ) দফা (গ) এর অধীন প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে প্রাপ্ত আবেদন বিবেচনাপূর্বক আবেদনকারীর প্রয়োজন ও জমির প্রকৃতি অনুযায়ী সম্পত্তি ইজারা বা ভাড়া প্রদান করা যাইবে এবং তৎলক্ষ্যে একটি চুক্তিপত্র সম্পাদন করিতে হইবে।
কিন্তু কক্সাবজার জেলা পরিষদ নিজেরাই আইন ভঙ্গ করেই মগনামা লঞ্চঘাটে অবস্থিত এবাদত খানা মার্র্কেটের তিনটি দোকান, এবাদত খানাসহ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই গোপনে স্থানীয় চার ব্যক্তিকে ভাড়া দিয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে ৩০ জুলাই ২০২১ ইংরেজী তারিখে বিকালে কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিল্লোল বিশ^াস এর সাথে মুঠোফোনে এ প্রতিবেদক বক্তব্য নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, মগনামা লঞ্চঘাটে এবাদত খানা ভাড়া দেওয়ার বিষয়টি তার জানা নেই। তবে তিনি স্থানীয়দের এ ব্যাপারে তাঁর দফতরে লিখিত অভিযোগ করতে পরামর্শ দেন। অভিযোগ পাওয়ার পর তিঁনি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন জানিয়েছেন।
মগনামা ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিম বলেন, এবাদত খানা ভাড়া দেওয়ার ঘটনা নিন্দনীয় ঘটনা। যেখানে পথচারী ও বাসের যাত্রীরা নামাজ আদায় করতো সেটি ভাড়া দেওয়ার ঘটনা বেমানান। তিনি এবাদত খানার কক্ষটি ভাড়ার চুক্তিপত্র বাতিলের জন্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নিকট দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।
পাঠকের মতামত: